আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, হালকা বাতাস বইছে নদীর বুকে। সেই মলিন আকাশ আর ঢেউ খেলানো জলের মাঝেই ভেসে আসছে সারি সারি নৌকা-কোথাও শঙ্খধ্বনি, কোথাও ঢাকের তুমুল বাজনা, আর তার মধ্যেই দেবী দুর্গাকে ঘিরে শেষ বিদায়ের উৎসব। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিজয়া দশমীর দিন বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝিনাই নদীতে নৌকা শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমারোহে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব।
কালিহাতী উপজেলার শতাধিক পূজামণ্ডপ থেকে দেবীকে বিদায় জানাতে ভেসে আসে নৌকার বহর। প্রত্যেকটি নৌকায় আলোয় মোড়া সজ্জা, উলুধ্বনি আর ভক্তদের উচ্ছ্বাসে সৃষ্টি হয় অপূর্ব এক জলরঙের দৃশ্য। নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে উপভোগ করেন অনন্য আয়োজন। কেউ মোবাইলের ক্যামেরায় ধরে রাখেন স্মৃতি, কেউ আবার ঢাকের তালে তালে নিজেই নেচে ওঠেন ভক্তদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রবিউল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ইসতিয়াক হোসেন নাসিফ, কালিহাতী সার্কেল এএসপি ইমরান হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েদা খানম লিজা, কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান, ডিবি ও নৌ পুলিশ সদস্যরাসহ রাজনৈতিক এবং পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ঝিনাই নদীর পাড়ে পুরাতন থানা ঘাটে অবস্থান নিয়ে উপভোগ করেন আধ্যাত্মিক মুগ্ধতার উৎসব।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম বলেন, কালিহাতীতে বিজয়া দশমীর এই অনুষ্ঠান এখন এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ধর্মীয় সম্প্রীতির এই উৎসবে হিন্দু-মুসলিম সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এ বছরের পুরো দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন আরও উৎসবমুখর পরিবেশে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিজয়া দশমীর এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। ভক্তদের চোখে তখন একসঙ্গে আনন্দ ও আবেগের স্রোত-বিদায়ের বেদনা থাকলেও প্রত্যেকে যেন উচ্চারণ করছেন একই মন্ত্র, “আসছে বছর আবার হবে।”