স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে ফুঁসলিয়ে এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে বাঁধন (২৫) নামের এক বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া গ্রামে। মামলা হওয়ার ২৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও এখনো স্কুল ছাত্রী শিমু আক্তার কে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিমুর পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, শিমু আক্তার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া মোহাম্মদ সেলিম মিয়া ও শিরিন বেগম দম্পতির মেয়ে এবং করটিয়া আবেদা খানম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত বাঁধন একই গ্রামের খন্দকার কামরুল ও বুলবুলি বেগম দম্পতির ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি বাঁধনের বাবা-মা বাড়ি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিমুর বাবা। ঘটনায় পর শিমুর বাবা ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ পত্র দায়ের এবং ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং /০৩) এর ৭/৯(১)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং ৩৮২/২৫।
টাঙ্গাইল সদর থানার অভিযোগ পত্র এবং মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, মামলার এক নম্বর আসামী বাঁধন তার সহযোগী আসামি রিমন (২৫), হৃদয় (২৭), হাসান (২২), অন্তর (২৩) এর সহযোগিতা নিয়ে করটিয়া আবেদা খানম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমু আক্তার কে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অযথা হয়রানি, অশ্লীল ভঙ্গি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে সে সারা না দেওয়ায় শিমু আক্তার কে ফুসলিয়ে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রধান আসামী বাঁধন । প্রেমে রাজি না হওয়ায় শিমুকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে শিমু প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বাহিরে যায়। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে নাবালিকা কন্যা শিমু আক্তার কে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে শিমুর বাবা-মা বাহিরে বেরিয়ে দেখে শিমু বাড়িতে নেই। তাৎক্ষণিক প্রধান আসামী বাঁধনের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তার মা বুলবুলি বেগম জানায় তার ছেলে বাড়ি নেই। এরপর অন্য আসামীদের বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায় নি। বাঁধনের মা বুলবুলি বেগম কে
এ মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী মোঃ সেলিম মিয়া।
সরেজমিন শিমুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্কুল ছাত্রী শিমুর বাবা সেলিম মিয়া ও মা শিরিন বেগম। এ সময় তারা জানান, আমরা অভিযুক্ত বাঁধনে বাড়িতে গিয়েছিল। এ ঘটনার পর তার পরিবারের লোকজন বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। বাঁধন যে আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে সেটা আমরা আরো স্পষ্টভাবে জানতে পেরেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পেজ থেকে আমার মেয়ের ছবি পোস্ট দেখে ।
শিমুর বাবা মোঃ সেলিম মিয়া জানান, এ ঘটনার পর আমি বাদী হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করি। মামলা করার পর থেকে বাঁধনের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে প্রায় সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানারকম হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় উল্টো আমাদের পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা গুমের মামলা দিয়েছে। ২৩ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও আমার মেয়ের কোন সন্ধান পায়নি। পুলিশ ও এ ব্যাপারে আমাদের কোন সহযোগিতা করছে না। আমার মেয়ে বেঁচে আছে, না মরে গেছে আমি বলতে পারছি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়েকে ফিরে পেতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শিমুর বাবা-মা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বাঁধন ছেলেটা ভাল নয়, সে এক জন বখাটে ছেলে। সে আগেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতিপূর্বে একটি মেয়ে তার ইভটিজিং শিকার হয়ে। পরবর্তীতে সে মেয়েটি ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২৩ দিন চলে এখনো নাবালিকা শিমুকে পুলিশ উদ্ধার করতে পারে নি। এ সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিমুকে উদ্ধার করে আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে প্রধান আসামি বাঁধনের এই ০১৯২৩৪৪৩৬৪৬ যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ দায়েরের পর এ এস আই হেলাল উদ্দিন কে তদন্তের দায়িত্বে দেওয়া হয়। সে তদন্ত করে স্কুল ছাত্রী শিমু আক্তার কে উদ্ধার করতে পারেনি। যেহেতু মামলাটি কোর্টে দায়ের করা হয়েছে এখন সব দায় দায়িত্ব কোর্টের। পরে টাঙ্গাইল ডিবি (দক্ষিণ ) উপপরিদর্শক এস আই নুরুজ্জামানকে মুঠো ফোনে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন-আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। মেয়ে টিকে উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।